ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকালে যে প্রজন্মটি বড় হয়ে উঠেছিল হিন্দু এবং মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের- সারা বাংলায় তাদের ছিল গভীর যোগাযোগ। এই লোকগুলো বেড়ে উঠেছিল সুভাষ বসুর আদর্শে, উজ্জীবিত ছিল এম.এন. রায় এবং অনুশীলন ও যুগান্তরের মতো গোপন সংগঠনের আদর্শবাদিতার দ্বারা এবং প্রভাবিত ছিল ১৯৩০-এর দশকের সন্ত্রাসবাদ এবং ভারত ছাড় আন্দোলন ও যুদ্ধকালীন জাপানপন্থী অনুভূতির দ্বারা। সবচেয়ে বড় যেটা, তারা ভাষার প্রশ্নটিকে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে পার্থক্য করার একটি উপায় হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ভাষার প্রশ্নটি পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু-মুসলমান উভয়ের কাছে এমন একটি বিষয় ছিল যা তাদের মধ্যে সমগ্র বিশ্বকে এক ধরনের সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে দেখার বোধ তৈরি করেছিল। বাঙালির মধ্যে এই বোধটি এখনো ক্রিয়াশীল। কোনো ভাষা আন্দোলনই দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে আন্তর্জাতিক নয়, হতে পারে না এবং ছিলও না। দুটি সহ-অবস্থান সে ফ অসম্ভব। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রেও কথাটি সত্য।
সোহরাওয়াদর্ীর মৃতু্য থেকে তার নিজের মৃতু্যকাল পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণজাগরণের যুগের প্রধান পুরুষ নিঃসন্দেহে শেখ মুজিব। হক, সোহরাওয়াদর্ী ও হাশেমের উত্তরসূরি শেখ মুজিব। হকের কাছ থেকে শেখ মুজিব শুধু যে দলীয় সংগঠন এবং যোগাযোগের সূত্র লাভ করেছিলেন তা নয়, ১৯৪০ সালের পাকিস্তান প্রস্তাব, যাতে দুটি মুসলমান রাষ্ট্রের কথা বলা হয়েছিল তার স্মৃতিও পেয়েছিলেন। আর সোহরাওয়াদর্ীর কাছ থেকে মুজিব পেয়েছিলেন ধর্মনিরপেক্ষ ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির বোধ। এগুলোর সঙ্গে তিনি যোগ করেছিলেন পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের অনুভূতি, যা তার জাতীয়তাবাদে প্রায় মার্কসবাদী এক ছোপ দিয়েছিল। আর তার নিজের অতীত থেকে তিনি পেয়েছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের স্মৃতি, যার মধ্যে ছিল কারাবাসের মতো ঘটনা; আর ছিল কলকাতাস্থ বন্ধুদের সঙ্গে একরাশ যোগাযোগ। মুজিবের কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে কখনো কখনো মনে হবে, তিনি যতটা না বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী ছিলেন তারচেয়ে বেশি ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদী।
সমাজতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করেন যার উৎস সন্ধানে গেলে সুভাষ বসুর কাছে গিয়ে পেঁৗছুতে হয়। শুরু থেকেই ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক মুজিব স্বাধীনতার সপক্ষে কাজ করে গেছেন। তিনি বুদ্ধিজীবী ছিলেন না। তিনি কখনোই ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের বিশ্বাস করতেন না, যেমন করতেন সোহরাওয়াদর্ী; যদিও প্রথমদিকে মনে হয়েছে তিনি বোধ হয় ঐক্যবদ্ধ বাংলার পক্ষে। তার বিশ্বাস যাই হয়ে থাকুক না কেন, তার ব্যক্তিত্বই তাকে তার যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত করেছিল। তিনি এক মৌলিক শক্তির প্রতিনিধিত্ব করেন। রাজনীতিতে ছিলেন ধূমকেতুর মতো। তিনি মুখের কথার মানুষ ছিলেন, লিখিত কথার নন; মানুষের নাম ও চেহারা মনে রাখার ক্ষমতা ছিল তার অসাধারণ। আর তার রাজনৈতিক বক্তব্য চয়ন ছিল এমন যা পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত ব্যবসায়ী শ্রেণী ও মহাজন- যাদের অনেকেই ছিল হিন্দু- তাদের মধ্যে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করত। বস্তুত তিনি ছিলেন এক স্বজ্ঞাত শক্তি, যার ব্যক্তিত্ব এবং কর্মকাণ্ড বাংলাদেশ মানসের গভীরতম প্রদেশকে অনুপ্রাণিত করেছিল। স্বাধীনতার জন্যে তার আকাঙ্ক্ষা যতটা তার বৌদ্ধিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছে ঠিক ততটাই বিচ্ছুরিত হয়েছে তার জনগণের ভেতর থেকে। তিনি ছিলেন এক নৌকা, যাতে চেপে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বয়ে যেতে পারত।
সোহরাওয়াদর্ীর মৃতু্যর পরে কেবল মুজিবই আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ হাতে পান এবং শুরু থেকেই দলে এক নতুন মাত্রা যোগ করেন। এই মাত্রা হচ্ছে সুতীক্ষ্ন এক জাতীয়তাবাদী স্বর, যা আবহমানকাল ধরে বাঙালি সংস্কৃতির মর্মমূলে প্রোথিত। ১৯০৫ সালে হিন্দু নেতৃত্বে যে বাঙালি পুনর্জাগরণের আন্দোলন হয়েছিল তার ভিত্তিভূমিতে ছিল হিন্দু-মুসলমানের প্রতিদ্বন্দ্বী চেতনার অবসান এবং বাঙালি সংস্কৃতির প্রাক-আর্থ শিকড় অনুসন্ধানের আকুতি। মুজিব যে আন্দোলন শুরু করেন তা ১৯০৫ সালের এই আন্দোলনের চেয়ে ভিন্ন। মুজিবের আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের মধ্যকার পার্থক্য যেমন স্পষ্ট হয়েছে তেমনি স্পষ্ট হয়েছে মুসলমান এবং হিন্দু বাঙালিদের ভেতরকার সাদৃশ্য। সাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতি নয়, অসাম্প্রদায়িক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চেতনার প্রতি জোর দিয়ে তিনি বাংলার প্রশস্তি গান করেন, এক সময় যেমন করা হয়েছিল 'বন্দে মাতরম' ধ্বনি কণ্ঠে তুলে নিয়ে। তবে পার্থক্য এখানেই যে, মুজিবের বাংলা প্রশস্তিতে হিন্দু দেবীদের উলেস্নখ আসেনি, এসেছে রবীন্দ্র কল্পনার সোনার বাংলা বা নজরুলীয় কল্পনার উন্নততর বাংলার ধারণা। বাঙালি জাতির ভাষা, ভূমি এবং রক্তের মধ্যেই এই কল্পনা তথা আকাঙ্ক্ষা শিকড় গেড়ে আছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের বহু আগেই মুজিব পূর্ব বাংলাবাসীদের মনে সাফল্যের সঙ্গে এই বোধ সঞ্চারিত করেন যে, তারা পাকিস্তানী আগ্রাসন ও অবিচারের নির্দয় শিকার। এর ফলে আন্দোলনরত বাঙালিরা সবসময় এক ধরনের নৈতিক স্বস্তিতে থেকেছে যে, তারা নির্দোষ এবং যা করেছে তা ন্যায্য। শেখ মুজিব রাজনীতিতে আসার মতো বয়স ও পরিপক্কতা প্রাপ্ত হন সুভাষ বসুর সমসাময়িককালে। অনেকটা অসচেতনভাবেই তিনি ঐ মহান বাঙালির জাতীয়তাবাদী মতবাদ প্রচার করতে শুরু করেন। দু'জনের মধ্যে পার্থক্য ছিল কেবল এক জায়গায়, বসু সবসময় ছিলেন অভিজাত, আর মুজিব কথা বলতেন সাধারণ মানুষের ভাষায়।
বঙ্গবন্ধুর রীতি ছিল কঠোর পরিশ্রম। অক্লান্তভাবে তিনি জেলায় জেলায়, মহকুমায় মহকুমায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে মাঠের পর মাঠ হেঁটে মানুষের সঙ্গে মিশেছেন, মানুষদের সংগঠিত করেছেন; তাদের চা, ভাত, ডাল, লবণ ভাগ করে খেয়েছেন; নাম মনে রেখেছেন, তাদের সঙ্গে মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন; ফসলের মাঠে প্রখর রোদে ঘর্মাক্ত হয়েছেন, বন্যাদুর্গত এলাকায় গেছেন, কেউ মারা গেলে শেষকৃত্যানুষ্ঠানে কেঁদেছেন এবং কুলখানিতে উপস্থিত থেকেছেন। শেখ মুজিব অন্যের আবেগ অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হতেন আন্তরিকতার সঙ্গে, আচরণ করতেন সহানুভূতির সঙ্গে এবং হাত বাড়িয়ে যা স্পর্শ করতেন তা গলফ ক্লাব বা ক্লাবের চেয়ার নয়, জনগণের ঘর্মাক্ত ধূলিমলিন হাত। নির্বাচনী জনসভায় বারবার উপস্থিত হয়ে তিনি জনগণের অনুভূতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষাকে আত্তীকরণ করতেন, যাতে করে কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে তাদের কাছ থেকে দূরে থেকেও তা তিনি আন্দাজ করতে পারতেন। জনগণের প্রতিক্রিয়া নির্ভুলভাবে আন্দাজ করার অতিমানবীয় ক্ষমতা ছিল তাঁর। জনগণ কি বিশ্বাস করে, কি চায় তা তিনি জানতেন; কারণ তিনি শুধু যে তাদের বোধগম্য ভাষায় সবকিছু ব্যাখ্যা করতে পারতেন তা নয়, ব্যাখ্যা করতেন এমনভাবে যাতে তা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, জনগণও এটা জানত বলে তারা বিশ্বাস করত তাঁর মিথ্যা বলার প্রয়োজন নেই। তিনি যেমন তাদের সঙ্গে সততার সঙ্গে কথা বলতেন তেমনি তারাও বলত তাঁর সাথে।
শেখ মুজিবের সংগঠিত করার বা অন্যদের দিয়ে সংগঠিত করানোর ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। ব্যবস্থাপক বা প্রশাসক না হওয়া সত্তেও তিনি আওয়ামী লীগের বার্তা পেঁৗছে দেয়ার জন্যে গ্রামে-গঞ্জে নাটক মঞ্চায়িত করার জন্যে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেন। অর্থনীতিবিদের সংগঠিত করেন পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতিমালা বিশেস্নষণ করে পূর্ব পাকিস্তানের উপর যে অন্যায় করা হচ্ছে, দ্বিমুখী আচরণ করা হচ্ছে তার প্রমাণ সন্ধানের জন্য। তিনি আইনজ্ঞদের উদ্বুদ্ধ করেছেন যাতে তারা জনগণের অসন্তুষ্ট হওয়ার মতো আরো কারণ, বা সরকারকে বিব্রত করার উপায় খুঁজে বের করেন। নারীদের উদ্বুদ্ধ করেছেন আধুনিক অধিকার দাবি করতে, গোঁড়া পশ্চিম পাকিস্তানীরা যেগুলোকে আপত্তিকর মনে করত। নৃত্যশিল্পীদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন প্রাচীন লোকনৃত্য সন্ধান করে বাঁশি ও ঢোল সহযোগে তা পরিবেশনের জন্যে। তার ছিল নিখাঁদ বাংলায় কবিতা আবৃত্তি করার মতো কবি, ছিল গান করার মতো কৃষক- এমন গান যা আগে কোনোদিন তারা গায়নি। তিনি শ্রমিকদের সমাজতন্ত্রের গৌরবগাথা শুনিয়ে তার আরব্ধের সহযাত্রী করেছেন। ব্রাহ্ম মানসিকতাসম্পন্নদেরকে রাবীন্দ্রিক মানবতাবাদের মন্ত্র শুনিয়ে তার পক্ষে এসে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করেছেন। এরকম বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি যা সংগঠিত করেন, ব্রিটিশ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাকে গণ-আন্দোলন হিসাবে অভিহিত করা যায়। তবে তাঁর এই আন্দোলনের কোথায় যেন একটু উন্মত্ততার সুর শোনা যেত।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এমন একটি আন্দোলনের নিয়তিই বিকাশ লাভ করা এবং তা যখন হয় তখন তাকে পরিণতির দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। যতই আন্দোলন উত্তাল হতে লাগল পাকিস্তান সরকার ততই তা দমন করার চেষ্টা করতে লাগল। এবং সরকারের দমন-নিপীড়ন যত কঠোর হলো আন্দোলনও তত শক্তিশালী হলো। বস্তুত, পাকিস্তানীদের কোনো আপস-রফার প্রস্তাব অথবা সংস্কার কার্যক্রম বা পারস্পরিক ছাড় দেয়ার প্রস্তাবে এমন আন্দোলন স্তিমিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। এটা বুঝতে পেরেই সরকার এই দিক থেকে তেমন কিছু করেনি। কিন্তু আন্দোলনের একটি পরিসমাপ্তি বা উপসংহারের প্রয়োজন ছিল। পাকিস্তানী সরকারই তা যোগান দেয় ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সমগ্র পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে আবির্ভূত হয়। এর পর শেখ প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তিনি সে পথে না গিয়ে অনমনীয় রইলেন: তার দেয়া ছয় দফা মানতে হবে। সামগ্রিকভাবে এই ছয় দফা ছিল স্বায়ত্তশাসনের দাবি- স্বাধীনতার দাবি। এই সময় সরকার এক মহাভুল করে বসল। তারা ছয় দফা মানতে অস্বীকার তো করলই, পার্লামেন্টের অধিবেশনও পিছিয়ে দিল।
এর বদলে ১৯৭১-এর মার্চে এল চরম অবস্থা। ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক ভাষণে শেখ আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা ছাড়া স্বাধীনতার জন্যে আর যা যা ঘোষণা করা যায়, সব করলেন। ফল হলো উদ্দীপনার বিপুল উচ্ছ্বাস। ছাত্ররা অস্ত্রসজ্জা ও প্রশিক্ষণের মহড়া শুরু করল, (হলুদ মানচিত্র খচিত) লাল সবুজ পতাকা উড়তে লাগল সারা পূর্ব পাকিস্তানের ভবনশীর্ষে। এরকম উদ্দীপনাময় পরিস্থিতিতে যথেষ্ট শত্রুতা ও সহিংসতা হলো। অবশেষে ২৬ শে মার্চ (২৫ শে মার্চ-অনুবাদক) মধ্যরাতে শেখকে গ্রেফতার করা হলো।
স্বাধীনতা যুদ্ধের কাহিনীর বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসে, যখন শেখ পাকিস্তানের কারাগার থেকে- যেখানে তাঁর প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁর দেশবাসীর উত্তাল আনন্দধ্বনির মধ্যে ঢাকায় এসে নামেন। সেই ১০ই জানুয়ারিতে তিনি সোনার বাংলাকে মুক্ত হিসেবে ঘোষণা করেন। এবং তাঁর নিজের আন্দোলনকে ষাট বছর আগে শুরু হওয়া আরেক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করে উদ্ধৃতি দেন রবীন্দ্রনাথের ১৯১১ সালে লেখা একটি কবিতা থেকে। সেটা ছিল মুজিবের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন, এমন একটা দিন যেদিন স্বাধীনতার জন্যে নিবেদিত একটি জীবন তার শীর্ষবিন্দুতে পেঁৗছেছিল, যেদিন ১৯০৫-১২ কাল পর্যায়ের ঘটনাবলী বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছিল মুসলিম বাংলার হাতে। শেখ যখন রবীন্দ্রনাথের সোনার বাংলা থেকে উদ্ধৃতি দেন জনতা গেয়ে ওঠে:
আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি ।।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে-
ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি ।।
কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো-
কী অাঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে-
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ওমা, আমি নয়নজলে ভাসি ।।
(কথা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: সূত্র: বাংলাদেশ দূতাবাস, ওয়াশিংটন, ডিসি।)
আমরা ব্যক্তিগতভাবে মুজিবের জন্য শোক প্রকাশ করি। তিনি ছিলেন সহজ-সরল একজন মানুষ, নিজের জাতি আর জনগণের জন্য যাঁর ছিল কিছু সহজ-সরল বিশ্বাস। কিন্তু তিনি তাদের জন্যে যা করতে চেয়েছিলেন তা নিজেই বুঝতেন না। ফলে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। তবু তিনি বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা। এই অভিধা তাঁর প্রাপ্য।
No comments:
Post a Comment