১৯৪৭ দেশ বিভাগের পর পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি হয় এক অযাচিত অদ্ভুত আবেগে। সেই আবেগের নাম ধর্ম। যোজন যোজন দূরে থেকেও পূর্ব বাংলা হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তান। কিন্তু আমাদের 'পাকিস্তানী' বানানো ছিল একধরনের কূটকৌশল। শোষণ করার ষড়যন্ত্র। আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্মভীরম্ন মানুষের আবেগকে পশ্চিমারা শোষণ এবং বঞ্চনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। আর তাই, তথাকথিত পাকিসত্মান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই শুরু হয় শোষণ, বঞ্চনা। বাঙালীরা পাকিস্তানে পরিগনিত হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আর সেটা নিশ্চিত করতেই মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন, 'উর্দু হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা।' আমরা যতটুকু মুসলমান তার চেয়ে বেশি বাঙালী। নদী অববাহিকার এই ব-দ্বীপে হিন্দু-মুসলমান খ্রীস্টান একাকার হয়ে যায়। ধর্মভীরু মানুষ পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ে যায় পুজো উৎসবে। এটাই বাঙালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি, কৃষ্টি। বাঙালীর সবচেয়ে প্রিয় তার মায়ের ভাষা। তাই মায়ের ভাষার কথা বলার অধিকারের দাবিতে শুরম্ন হলো যুদ্ধ। রাজপথ রক্তে রঞ্জিত ছিল ভাষার জন্য জীবনদানের এক অনন্য নজির স্থাপন করল বাঙালী জাতি। এই যুদ্ধে আমরা জয়ী হলাম। রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে বাংলা স্বীকৃতি পেল। কিন্তু শোষণ বঞ্চনা থাকল অব্যাহত। এর মধ্যেই বিকষিত হলেন বাঙালীর প্রাণপুরম্নষ, বাঙালীর মুক্তিদাতা। শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বৈষম্যের বিরম্নদ্ধে ডাক দিলেন জাগরণের। বাঙালীকে শেখালেন সংগ্রাম করতে, সাহসী পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের কথা বলতে। '৫৮, '৬২র পথ পেরিয়ে মুজিব ঘোষণা করলেন বাঙালীর মুক্তির সনদ। ৬ দফা। বাঙালীর জাগরণের নেতা দেখালেন কিভাবে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হলো। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রহসন মঞ্চস্থ হলো। তখনই পশ্চিমা শোষকরা শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারত। তাহলে এই দীর্ঘ যুদ্ধের ইতিহাস রচিত হতো না। কিন্তু সেটা তারা পারেনি মূলত জাতির পিতার অকুতোভয় মানসিকতা এবং তাঁর নেতৃত্বে বাঙালী জাতির দৃঢ় ঐক্যের কারণে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, সারাদেশে বাঙালীর বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ উত্তপ্ত করল। শুরম্ন হলো তীব্র গণআন্দোলন। এই গণআন্দোলন রূপ নিল এক গণঅভু্যত্থানে। অবশেষে বাঙালীর পথপ্রদর্শক, বাঙালীর জাগরণের কবি মুক্তি পেলেন। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু। দ্বিতীয় খ- যুদ্ধেও জয়ী হলো বাঙালী।
'৬৯-এর গণঅভু্যত্থানের পাকিস্তান রাষ্ট্রের রং ফিকে হয়ে এসেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সহ-অবস্থানের সম্ভাবনা শেষ তলানিতে পৌঁছেছিল। তারপরও গণতান্ত্রিক এবং সভ্য সমাজের রীতি অনুযায়ী এই বিচ্ছেদ কাম্য ছিল। '৭০-এর নির্বাচন ছিল সেই আকাঙ্ৰার বাস্তব প্রতিফলন। ঐ নির্বাচনে এক থাকার শেষ যোগসূত্রটাও হারিয়ে গেল। ভোট বিন্যাস প্রমাণ করে দিল এক থাকা আর সম্ভব না। গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী, সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু যারা পাকিসত্মান রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালীদের ক্রীতদাস করে রাখা। বাংলাদেশের সম্পদ লুটে পশ্চিমারা বিত্তবৈভবে গা ভাসাবে। '৭০-এর নির্বাচন সেই স্বপ্নের মৃত্যু আনে। পাকিস্তানীদের সামনে দুটি বিকল্প ছিল-
১. বাঙালীদের নেতৃত্ব মেনে 'পাকিসত্মান' রাষ্ট্রে থাকা।
২. দুটো আলাদা দেশ ভাগের সমঝোতা।
শোষকরা সবসময়ই ভুল করে। তারা শক্তিতে বিশ্বাসী হয়। পাকিসত্মানীরাও তাই করল। তারা বাঙালীর অধিকার শক্তি দিয়ে অস্ত্র দিয়ে দমন করতে চাইল। ব্যালটের জবাব দিল বুলেট দিয়ে। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ডাক দিলেন 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।' ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিসত্মানীরা হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর। হত্যা, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগের মাধ্যমে নৃশংসতার এক নতুন বিভীষিকার ইতিহাস লিখল পাকিসত্মানী জানত্মারা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রে দীৰিত বাঙালী জাতি তখন প্রস্তুত। জীবনের চেয়েও দামী প্রিয় মাতৃভূমি। তাই জীবন দিয়ে মাতৃভূমি বাঁচানোর সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ল বীর বাঙালী, 'যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে'। অপারেশন সার্চ লাইটের প্রথম প্রহরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু সব বাঙালীর হৃদয়ে তখন মুজিব, মুজিব বাঙালীর হৃদস্পন্দন। নয় মাসের এক বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে বিজয়ী হলো বাঙালী। অভু্যদয় ঘটল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো পাকিসত্মানী জানত্মারা। বিশ্বমানচিত্রে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে যাত্রা শুরম্ন করল অসামপ্রদায়িক আর শোষণমুক্ত এক নতুন রাষ্ট্র। এ যুদ্ধেও আমরা জয়ী হলাম। বেশির ভাগ মানুষ মনে করল যুদ্ধটা বোধহয় শেষ। কিন্তু যুদ্ধটা তখনও শেষ হয়নি।
সামরিক বিজ্ঞানে যে কোন যুদ্ধের দুটো কৌশল থাকে। একটি হলো জয়ের কৌশল, কিভাবে প্রতিপৰকে পরাজিত করতে হবে। অন্যটি হলো পরাজয়ের কৌশল, যুদ্ধে হারার পরও প্রতিপৰকে কিভাবে জয়ের সুফল থেকে বঞ্চিত করা যাবে। কিভাবে জয়ী প্রতিপৰকে আবার হারানো যাবে। যুদ্ধের এই দ্বিতীয় পরিকল্পনাটি থাকে সুদূরপ্রসারী। '৭১-এর পাকিসত্মানী প্রশিৰিত সেনাবাহিনী দুটো কৌশল নিয়েই এগিয়েছিল। যুদ্ধের শুরম্নতেই তাই তারা প্রবেশ করিয়েছিল, তাদের কিছু এজেন্ট। যারা বাঙালীদের পৰে কাজ করবে, কিন্তু সময় সুযোগমতো সবকিছু উল্টে দেবে। আজ মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহগুলো বিশেস্নষণ করলে এ রকম একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়, জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে পাকিসত্মানী পস্নান্টেড। পাকিসত্মানে বড় হওয়া এই সেনা অফিসার বাংলায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না। গণঅভু্যত্থান এবং অসহযোগ আন্দোলনে তিনি কাজ করেছেন পাকিসত্মানীদের পৰে। বিশেষ করে, অসহযোগ আন্দোলনে তিনি কাজ করেছেন বাঙালীর বিরম্নদ্ধে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাঙালী নিধনে তাঁর উপস্থিতির অনেক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে জিয়ার বিভিন্ন মতদ্বৈততারও খবর পাওয়া যায়। সাধারণভাবে দেখলে এসব একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান সর্বজনবিদিত। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি বীরোত্তম খেতাবে ভূষিত। কিন্তু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর এই ঘটনাপ্রবাহ মেলালে তখন একে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যাবে না। জিয়ার নাটকীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এবং '৭৫ থেকে '৮১ পর্যনত্ম ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে একটি যৌক্তিক যোগসূত্র রয়েছে। আর এই যোগসূত্রেই আমরা পাব দ্বিতীয় পর্বের যুদ্ধের পৰ-প্রতিপৰ। একদিন নিশ্চয়ই গবেষকরা মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর জিয়ার ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করবেন এবং আসল সত্য খুঁজে বের করবেন।
জিয়া ছাড়াও '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বেশ ক'জন নাটকীয়ভাবে পাকিসত্মান থেকে পালিয়ে যুদ্ধে এসেছিলেন। সন্দেহ নেই এদের অনেকেই দেশের টানে জীবনবাজি রেখে মৃতু্যকে হাতের মুঠোয় নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সবাই কি তাই? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস পড়লে আমরা দেখি, অনেক জার্মান নাৎসী যুদ্ধের মাঝপথে ব্রিটেন এবং রাশিয়া পৰ নিয়েছিল। তারা জার্মানদের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ করলেও আদোতে ছিল নাৎসীদের পস্নান্টেড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের আত্মঘাতী পরিকল্পনার লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে আসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কি এধরনের ঘটনা ঘটেনি? খন্দকার মোশতাক মুক্তিযুদ্ধে কি করেছিলেন? ফারম্নক-রশীদ যেভাবে 'মুক্তিযোদ্ধা' হয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে গবেষণার দাবি রাখে। মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই ফারম্নক-রশীদ-ডালিম চক্র, দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরম্ন করে। এই যুদ্ধের চুড়ানত্মরূপ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যার মধ্যে দিয়ে পাকিসত্মানী শোষক চক্র, দ্বিতীয় যুদ্ধে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে দেশী-বিদেশী চক্রানত্ম ছিল, কিন্তু এই হত্যার মূল সূত্র ছিল '৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- কেবল একজন ব্যক্তির হত্যাকা- ছিল না। এই হত্যাকা- ছিল বাংলাদেশের এবং মুক্তিযুদ্ধের হত্যাকা-। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের এই ঘটনার মাধ্যমে শুরম্ন হয় উল্টোপথ চলা। খুব সোজাসাপটাভাবে বললে, বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিসত্মান বানানোই ছিল এই হত্যাকা-ের মূল উদ্দেশ্য। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে সেই যাত্রার সূচনা হয়।
১৯৭৫-এর আগস্টের পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রৰমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। সমপ্রতি জাতির পিতার হত্যা মামলা চূড়ানত্ম আদালতের রায় কার্যকর করা হয়েছে। কয়েকজন হত্যাকারী বিচারের রায়ে দ-িতও হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বিশেস্নষণ করলে এই ঘটনায় জিয়াউর রহমানের সংশিস্নষ্টতার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ঘটনার দিন যখন জিয়াকে জানানো হলো প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড, তখন উত্তরে তিনি বললেন 'সো হোয়াট ভাইস প্রেসিডেন্ট উইল টেক ওভার।'... বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার পৰে এটা কি বলা সম্ভব? খুনী মোশতাক, ফারম্নক-রশীদ চক্রের জবানী এবং অন্যান্য সাৰ্যপ্রমাণে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন। কিন্তু এটা জানার পরও উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে, তিনি তাঁর উপর অর্পিত কোন দায়িত্ব পালন করেননি। লৰণীয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগই 'মুক্তিযোদ্ধা' অর্থাৎ সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবেই তাদের 'পস্নান্টেড' করা হয়েছিল। আর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে এদের নেতৃত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। যার আপাত পরিচয় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন সেক্টর কমান্ডার এবং একজন বীরোত্তম। তিনি তখন আসলে বাঙালীর দানব।
জিয়া রাষ্ট্রৰমতা দখল করেই জাতির পিতার খুনীদের ইনডেমনিটি বহাল রাখেন। তিনি তাদের অনেককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোভনীয় চাকরি দেন। জিয়া ৰমতা গ্রহণ করে সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নামে মুক্তিযোদ্ধা নিধন শুরম্ন করেন। কর্নেল তাহেরসহ প্রায় দুই হাজার সেনাবাহিনীর নানা সত্মরের সদস্য প্রহসনের বিচারের বলি হন। জিয়া '৭২-এর সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সত্মম্ভগুলো সরিয়ে ফেলেন সংবিধান থেকে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। নিষিদ্ধ জামায়াত আবার রাজনীতি করার সুযোগ পায়। বিদেশী নাগরিক গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। ৰমতায় বসে রাষ্ট্রীয় অর্থে মুসলিম লীগের মতো একটি পাঁচমিশালী দল দঠন করেন, যার নাম দেন 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল'। একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জিয়া একটি রাবার স্টাম্পের পার্লামেন্ট গঠন করেন। ঐ সংসদের নেতা করেন একজন স্বাধীনতাবিরোধীকে। জিয়া দালাল আইন বাতিল করেন। জেল থেকে মুক্তি দেন চিহ্নিত অপরাধে অভিযুক্ত স্বাধীনতাবিরোধী এবং রাজাকারদের। অর্থাৎ ১৯৭১-এ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যা কিছু অর্জন করেছিলাম তার পুরোটাই ধুয়েমুছে, 'বাংলাদেশ'কে 'মুক্তিযোদ্ধা' জিয়া একটুকরো পাকিসত্মান বানিয়ে ফেলেন। '৭১-এর পরাজয়ের এক চরম প্রতিশোধ নেয় দেশী-বিদেশী সেই গোষ্ঠী যারা কোনদিন বাংলাদেশ চায়নি।
জিয়া বাংলাদেশের জোটনিরপেৰ পররাষ্ট্র নীতি থেকে সরে এসে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে সমার্পিত করেন বাংলাদেশকে। আবার সামপ্রদায়িকতার বিষবাম্পে আক্রানত্ম হয় বাংলাদেশ। ধর্মের বিভাজন রেখা তৈরি হয়। জিয়া রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করতে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটান দুর্নীতি এবং দুবর্ৃত্তায়নের। 'মানি ইজ নো প্রবলেম'-এর আলোকে আসলে কালো টাকার দৌরাত্ম্য, পেশী শক্তির দৌরাত্ম্য কায়েম হয় রাজনীতিতে। '৮১-তে জিয়াউর রহমান এক সেনা অভু্যত্থানে নিহত হলেও তার রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত থাকে '৯০ পর্যনত্ম।
জাতির পিতার হত্যাকা-ের পর উল্টোযাত্রার বিপরীত গল্পটাও শুরম্ন হয় ১৯৮১-তেই। এই গল্প বাঙালীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী, শোষকরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে যে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিল, বীর বাঙালী সেই যুদ্ধের শেষ হতে দেয়নি। আবার এই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরম্ন হয় ১৯৮১-র ১৭ মে। জাতির পিতার রক্তে ভেজা মাটিতে ফিরে আসেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। যার কারণে পাকিসত্মানীদের জয়টা চূড়ানত্ম জয় হলো না। শেখ হাসিনা যদি ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট দেশে থাকতেন, তিনিও পিতার মতোই শহীদ হতেন, কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসটা অন্যভাবে লেখা হবে, সবার অলৰ্যে নিয়তি যেন এটা ঠিক করেই রেখেছিলেন। তাই সুদূর জার্মানিতে বসে শেখ হাসিনা শুনলেন, জীবনের সবচেয়ে মর্মন্তুদ সংবাদ। পিতার রক্তের ঋণ শোধ করতে তিনি প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এলেন, পিতার হত্যার ৬ বছর পর। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনই বাঙালীর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাল, বাঙালীর অধিকার আদায়ের পুনর্জাগরণের পথ দেখাল। শেখ হাসিনা শোকেবিধুর অবরম্নদ্ধ বাংলাদেশে এলেন জাগরণের ডাক দিতে। আবার শুরম্ন হলো আন্দোলন, সংগ্রাম। এ যেন '৭১-এর পূর্ববর্তী ঘটনাবলীরই পুনরাবৃত্তি। পার্থক্য শুধু একটু, '৫২ থেকে '৭১ আমরা সংগ্রাম করেছি অবাঙালীদের বিরম্নদ্ধে আর এবার বাঙালী চেতনাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বাঙালীর বিরম্নদ্ধে। পাকিসত্মানীদের বিরম্নদ্ধে সংগ্রাম যতটা না কঠিন ছিল তার চেয়ে কঠিন হলো এই সংগ্রাম। কারণ, '৭৫-এর পর থেকে এই স্বাধীনতা গোষ্ঠী সংগঠিত হয়েছে, বিত্তশালী হয়েছে। তাদের আলাদা করাও কঠিন। শেখ হাসিনা ১৯৮১-তে এসে গণতন্ত্রের ডাকদিলেন, মূলত ১৯৮৩ সাল থেকে শুরম্ন হলো গণতন্ত্রের সংগ্রাম। এই সংগ্রামের একটা পর্যায়ে প্রায় এক বছর পর জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী রাজনীতির মঞ্চে পা রাখলেন। এই ঘটনাটিও '৭১-এর মতোই। '৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের ফসল যেন বাঙালীরা ঘরে তুলতে না পারে সেজন্য যেমন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করানো হয়েছিল জিয়া-মোশতাক-ফারম্নক-রশীদকে, তেমনি '৮৩-তে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢুকে যায় বিএনপি-জামায়াত। যে দলটির জন্ম হয়েছিল অবৈধ সামরিক শাসকের গর্ভে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কেনাবেচার মাধ্যমে যে দলটির জন্ম, যে দলটি রাজনীতিতে পেশী শক্তি, সন্ত্রাস এবং কালো টাকার প্রবেশ ঘটানো_ তারাই হলো গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সৈনিক। অবলীলায় তারা আওয়ামী লীগের পাশে আন্দোলনে নেমে পড়ল। সঙ্গে যোগ হলো জামায়াত। '৭১-এ যারা বাংলাদেশের অসত্মিত্বের বিরম্নদ্ধে লড়াই করেছে, আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে। এভাবেই '৭১-এর মতো '৮৩-৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মিশে গেল অগণতান্ত্রিক শক্তি। তাই গণতন্ত্র তার পূর্ণতা পেল না। '৯১-এর নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করল বিএনপি। কিন্তু শক্তিশালী বিরোধী দলের কারণে তাদের মেনে নিতে হলো সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবি।
যে দলের জন্ম ৰমতার মধ্যে, স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতে যে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি তারা কিভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলবে? এটা স্পস্ট হলো '৯১-৯৬ বিএনপি শাসনামলে। সংসদ নেত্রী সংসদে আসেন না, সংসদের পাশ কাটিয়ে আইন প্রণয়ন হয় অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে। সংসদীয় কমিটি গঠিত হয় না। এভাবে নামেই সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হলো, বাসত্মবে চলল প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র।
বিএনপি এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি একই মুদ্রার এ-পিঠ ও-পিঠ, দুটোই সৃষ্টি হয়েছিল রাষ্ট্রীয় কোষাগার উজাড় করা অর্থে। তাই জাতীয় পার্টি বা এরশাদ ৰমতায় থাকার জন্য ১৯৮৬-তে যেভাবে মিডিয়া কু্যর আশ্রয় দিয়েছিলেন, বেগম জিয়াও ১৯৯৪-তে মাগুরা উপনির্বাচনে একই কা- করলেন। ভোটের অধিকার পাল্টে দিয়ে নিজের দলের প্রার্থীকে জয়ী করার এক বাজে দৃষ্টানত্ম স্থাপন করলেন। এই উপনির্বাচন, জাতির সামনে উন্মুক্ত করে দিল বিএনপির আসল চেহারা, তাদের স্বৈরাচারী রূপ। আমরা সেই যুদ্ধে আসলে হেরেই থাকলাম। বাংলাদেশ এগুতে থাকল 'আরেকটি পাকিসত্মান' হবার দিকেই।
মূলত মাগুরা নির্বাচন সকলের চোখ খুলে দিল। এই নির্বাচন প্রমাণ করল গণতন্ত্র থেকে আমরা বহুদূরে। '৯১ থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি বিষয় স্পষ্ট হলো, তা হলো এখনও আমরা গণতন্ত্র থেকে বহুদূরে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের যে উল্টোপথে যাত্রা শুরম্ন হয়েছিল, আমরা আজো সেই পথেই হাঁটছি। বিএনপির এই শাসনামলে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হলো তাহলো সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা আবার ডাক দিলেন গণতন্ত্রের সংগ্রামের ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের। তিনি ঘোষণা করলেন নির্দলীয় নিরপেৰ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা। আবার আন্দোলন, অধিকার আদায়ের জন্য মানুষের জীবনদান। কিন্তু '৭১-এর পরাজিত শক্তিরা কি এত সহজে মাথানত করে? তারা শেষ চেষ্টা করে। ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রম্নয়ারি এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ৰমতা অাঁকড়ে রাখতে চায়। কিন্তু আন্দোলনের তোড়ে প্রহসনের নির্বাচন ভেসে যায়। অবশেষে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেৰ তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। নানা ষড়যন্ত্র পেরিয়ে অবশেষে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সব অপপ্রচার কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে অবশেষে ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয় হয়।
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তাদের বিরম্নদ্ধে সব অপপ্রচারের জবাব দেয়। দেশে কোন দুর্ভিৰ হয়নি, বরং বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার, নারীদের ৰমতায়ন ইত্যাদি নানা উদ্যোগ বাংলাদেশকে একটি কল্যাণকামী শোষণমুক্ত রাষ্ট্রের পথে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ সব ৰেত্রে এক সম্ভাবনার চিহ্ন রেখেছে। কিন্তু যুদ্ধটা তখনও শেষ হয়নি।
'৯৬ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সুশাসন '৭১-এর পরাজিত শক্তিকে আবার ষড়যন্ত্রের পথে নিয়ে যায়। '৭১-এর পরাজিত শক্তির নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপি এবং জামায়াত বুঝতে পারে যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবাধ ও নিরপেৰ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরানো অসম্ভব। তাই, শুরম্ন হয় নতুন চক্রানত্ম। একদিকে সারাদেশে জঙ্গীদের আর্থিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়, অন্যদিকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নীলনকশা তৈরি করা হয়। আর এই ষড়যন্ত্রে আরেকবার পরাজিত হয় মুক্তিযুদ্ধের পৰের শক্তি। ২০০১ সালের এক 'অনবদ্য কারচুপির নির্বাচনে ৪২ ভাগ ভোট পেয়েও আওয়ামী লীগ পায় মাত্র ৬২ আসন। '৭১-এর পরাজিত শক্তিদের জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়। এই বিজয়ের পর পরই তাদের সব আক্রোশ এসে পরে নিরীহ, শানত্মিপ্রিয়, গণতন্ত্রকামী মানুষের উপর। আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অভিযোগে নির্বিচারে হত্যা করা হয়, লুটপাট, অগি্নসংযোগ আর ধর্ষণ করা হয় '৭১-এর স্টাইলে। রক্তাক্ত হয় মানবতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে একদিকে বাংলাদেশে দুর্নীতি, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়, অন্যদিকে সারাদেশে উত্থান ঘটে জঙ্গীদের।
এ সময় তারা বুঝে যায়, ৰমতাকে চিরস্থায়ী করতে তাদের প্রয়োজন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো আরেকটা ঘটনা। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন যুদ্ধটা শেষ হবে না। মূলত এই চিনত্মা থেকেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পস্নট সাজানো হয়। এখন ঐ গ্রেনেড হামলা মামলার তদনত্ম চলছে, ঐ তদনত্মে যে সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল একই সূত্রে গাঁথা। মুক্তিযুদ্ধেরই এটি আরেকটি অধ্যায়। এই যুদ্ধটা আজো চলছে...।
এরপর বুড়িগঙ্গার অনেক জল গড়িয়েছে। আবার একটি গণঅভু্যত্থানের মুখে বিএনপি-জামায়াত জোট আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের চেষ্টা করেছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ড. ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে। কিন্তু এতে আন্দোলন আরও তীব্র হয় অবশেষে বিএনপির অনুগ্রহপুষ্টদের উদ্যোগে গঠিত হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপি যাকে ১০ জনকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান করেছিলেন, সেই মঈন উ আহমেদের উদ্যোগে আসে ওয়ান ইলেভেন মূলত গণআক্রোশ থেকে বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচাতে। দুর্নীতির দুর্গন্ধময় বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচাতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভারসাম্য কর্মসূচী নেয়। একজন বিএনপির চিহ্নিত দুর্নীতবাজ ধরেই তারা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বা কর্মীকে ধরে তার গায়ে দুর্নীতিবাজের সিল লাগিয়ে দেয়। গ্রেফতার করে শেখ হাসিনাকে। '৭১-এর নীলনকশা বাসত্মবায়নের লৰ্যেই ভিন্ন পথে হাঁটতে থাকে তারা। কিন্তু নীরব ৰোভ আর আনত্মর্জাতিক চাপের কাছে শেষ পর্যনত্ম নতিস্বীকারে বাধ্য হয় ওয়ান ইলেভেন সরকার। একটি নিভর্ুল ভোটার তালিকা তৈরি হয়, স্বচ্ছ ব্যালট বাঙ্রে ব্যবস্থা হয়। অবশেষে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই বছর পর একটি অবাধ ও নিরপেৰ নির্বাচনে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পৰে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয়। তিন-চতুথাংশেরও বেশি আসন পেয়ে জয়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। এবার আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে। সে অনুযায়ী এক বছর পর আনত্মর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন ১৯৭৩-এর আওতায় একটি ট্রাইবু্যনালও গঠন করেছে। বিভিন্ন মামলায় কয়েকজন জামায়াত নেতাকে সরকার গ্রেফতারও করেছে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর, বিচার বিভাগকে অর্গলমুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সর্বোচ্চ আদালতে আটকে রেখেছিল '৭৫-এর অপশক্তির দোসররা। আওয়ামী লীগ দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই বাধা অপসারিত হয়। সর্বোচ্চ আদালত খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ম্ তু্ দন্ডে দন্ডিত করে। এদের কয়েকজনের রায় কার্যকর হয়েছে, কিন্তু এখনও ডালিম, রশীদের মতো খুনীরা পালিয়ে আছে।
স্বাধীন বিচার বিভাগে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ এক ঐতিহাসিক রায়ে পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত এক বাংলাদেশ গড়ার বাধাগুলো একে একে অপসারিত হচ্ছে।
কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যুদ্ধটা এখনও চলছে। '৭১-এর পরাজিত শক্তি '৭৫-এর অপশক্তি আবার আঘাত হানতে পারে, তারা সেই হুমকিও দিচ্ছে।
তাই আজ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্ব ভুলে, মান অভিমান না করে আমাদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করতে হবে, তাহলেই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পাব। যে দেশে যারাই ৰমতায় আসুক, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পদদলিত করবে না, মানুষের অধিকার হরণ করবে না, জাতির পিতাকে অসম্মান করবে না। সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার যুদ্ধে আসুন আমরা শরিক হই, চূড়ানত্ম বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত।
'৬৯-এর গণঅভু্যত্থানের পাকিস্তান রাষ্ট্রের রং ফিকে হয়ে এসেছিল। পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সহ-অবস্থানের সম্ভাবনা শেষ তলানিতে পৌঁছেছিল। তারপরও গণতান্ত্রিক এবং সভ্য সমাজের রীতি অনুযায়ী এই বিচ্ছেদ কাম্য ছিল। '৭০-এর নির্বাচন ছিল সেই আকাঙ্ৰার বাস্তব প্রতিফলন। ঐ নির্বাচনে এক থাকার শেষ যোগসূত্রটাও হারিয়ে গেল। ভোট বিন্যাস প্রমাণ করে দিল এক থাকা আর সম্ভব না। গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী, সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পাবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু যারা পাকিসত্মান রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালীদের ক্রীতদাস করে রাখা। বাংলাদেশের সম্পদ লুটে পশ্চিমারা বিত্তবৈভবে গা ভাসাবে। '৭০-এর নির্বাচন সেই স্বপ্নের মৃত্যু আনে। পাকিস্তানীদের সামনে দুটি বিকল্প ছিল-
১. বাঙালীদের নেতৃত্ব মেনে 'পাকিসত্মান' রাষ্ট্রে থাকা।
২. দুটো আলাদা দেশ ভাগের সমঝোতা।
শোষকরা সবসময়ই ভুল করে। তারা শক্তিতে বিশ্বাসী হয়। পাকিসত্মানীরাও তাই করল। তারা বাঙালীর অধিকার শক্তি দিয়ে অস্ত্র দিয়ে দমন করতে চাইল। ব্যালটের জবাব দিল বুলেট দিয়ে। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ডাক দিলেন 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।' ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিসত্মানীরা হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর। হত্যা, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগের মাধ্যমে নৃশংসতার এক নতুন বিভীষিকার ইতিহাস লিখল পাকিসত্মানী জানত্মারা। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রে দীৰিত বাঙালী জাতি তখন প্রস্তুত। জীবনের চেয়েও দামী প্রিয় মাতৃভূমি। তাই জীবন দিয়ে মাতৃভূমি বাঁচানোর সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ল বীর বাঙালী, 'যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে'। অপারেশন সার্চ লাইটের প্রথম প্রহরেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু সব বাঙালীর হৃদয়ে তখন মুজিব, মুজিব বাঙালীর হৃদস্পন্দন। নয় মাসের এক বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে বিজয়ী হলো বাঙালী। অভু্যদয় ঘটল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো পাকিসত্মানী জানত্মারা। বিশ্বমানচিত্রে লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে যাত্রা শুরম্ন করল অসামপ্রদায়িক আর শোষণমুক্ত এক নতুন রাষ্ট্র। এ যুদ্ধেও আমরা জয়ী হলাম। বেশির ভাগ মানুষ মনে করল যুদ্ধটা বোধহয় শেষ। কিন্তু যুদ্ধটা তখনও শেষ হয়নি।
সামরিক বিজ্ঞানে যে কোন যুদ্ধের দুটো কৌশল থাকে। একটি হলো জয়ের কৌশল, কিভাবে প্রতিপৰকে পরাজিত করতে হবে। অন্যটি হলো পরাজয়ের কৌশল, যুদ্ধে হারার পরও প্রতিপৰকে কিভাবে জয়ের সুফল থেকে বঞ্চিত করা যাবে। কিভাবে জয়ী প্রতিপৰকে আবার হারানো যাবে। যুদ্ধের এই দ্বিতীয় পরিকল্পনাটি থাকে সুদূরপ্রসারী। '৭১-এর পাকিসত্মানী প্রশিৰিত সেনাবাহিনী দুটো কৌশল নিয়েই এগিয়েছিল। যুদ্ধের শুরম্নতেই তাই তারা প্রবেশ করিয়েছিল, তাদের কিছু এজেন্ট। যারা বাঙালীদের পৰে কাজ করবে, কিন্তু সময় সুযোগমতো সবকিছু উল্টে দেবে। আজ মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহগুলো বিশেস্নষণ করলে এ রকম একটা স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়, জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে পাকিসত্মানী পস্নান্টেড। পাকিসত্মানে বড় হওয়া এই সেনা অফিসার বাংলায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন না। গণঅভু্যত্থান এবং অসহযোগ আন্দোলনে তিনি কাজ করেছেন পাকিসত্মানীদের পৰে। বিশেষ করে, অসহযোগ আন্দোলনে তিনি কাজ করেছেন বাঙালীর বিরম্নদ্ধে। অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাঙালী নিধনে তাঁর উপস্থিতির অনেক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে জিয়ার বিভিন্ন মতদ্বৈততারও খবর পাওয়া যায়। সাধারণভাবে দেখলে এসব একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান সর্বজনবিদিত। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি বীরোত্তম খেতাবে ভূষিত। কিন্তু ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর এই ঘটনাপ্রবাহ মেলালে তখন একে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলা যাবে না। জিয়ার নাটকীয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া এবং '৭৫ থেকে '৮১ পর্যনত্ম ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে একটি যৌক্তিক যোগসূত্র রয়েছে। আর এই যোগসূত্রেই আমরা পাব দ্বিতীয় পর্বের যুদ্ধের পৰ-প্রতিপৰ। একদিন নিশ্চয়ই গবেষকরা মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর জিয়ার ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করবেন এবং আসল সত্য খুঁজে বের করবেন।
জিয়া ছাড়াও '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে বেশ ক'জন নাটকীয়ভাবে পাকিসত্মান থেকে পালিয়ে যুদ্ধে এসেছিলেন। সন্দেহ নেই এদের অনেকেই দেশের টানে জীবনবাজি রেখে মৃতু্যকে হাতের মুঠোয় নিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু সবাই কি তাই? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস পড়লে আমরা দেখি, অনেক জার্মান নাৎসী যুদ্ধের মাঝপথে ব্রিটেন এবং রাশিয়া পৰ নিয়েছিল। তারা জার্মানদের বিরম্নদ্ধে যুদ্ধ করলেও আদোতে ছিল নাৎসীদের পস্নান্টেড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের আত্মঘাতী পরিকল্পনার লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে আসে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কি এধরনের ঘটনা ঘটেনি? খন্দকার মোশতাক মুক্তিযুদ্ধে কি করেছিলেন? ফারম্নক-রশীদ যেভাবে 'মুক্তিযোদ্ধা' হয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে গবেষণার দাবি রাখে। মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বেই ফারম্নক-রশীদ-ডালিম চক্র, দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরম্ন করে। এই যুদ্ধের চুড়ানত্মরূপ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এই হত্যার মধ্যে দিয়ে পাকিসত্মানী শোষক চক্র, দ্বিতীয় যুদ্ধে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে দেশী-বিদেশী চক্রানত্ম ছিল, কিন্তু এই হত্যার মূল সূত্র ছিল '৭১-এর পরাজয়ের প্রতিশোধ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা- কেবল একজন ব্যক্তির হত্যাকা- ছিল না। এই হত্যাকা- ছিল বাংলাদেশের এবং মুক্তিযুদ্ধের হত্যাকা-। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের এই ঘটনার মাধ্যমে শুরম্ন হয় উল্টোপথ চলা। খুব সোজাসাপটাভাবে বললে, বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিসত্মান বানানোই ছিল এই হত্যাকা-ের মূল উদ্দেশ্য। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের মধ্য দিয়ে সেই যাত্রার সূচনা হয়।
১৯৭৫-এর আগস্টের পর নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রৰমতা দখল করেন জিয়াউর রহমান। সমপ্রতি জাতির পিতার হত্যা মামলা চূড়ানত্ম আদালতের রায় কার্যকর করা হয়েছে। কয়েকজন হত্যাকারী বিচারের রায়ে দ-িতও হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বিশেস্নষণ করলে এই ঘটনায় জিয়াউর রহমানের সংশিস্নষ্টতার স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। ঘটনার দিন যখন জিয়াকে জানানো হলো প্রেসিডেন্ট ইজ ডেড, তখন উত্তরে তিনি বললেন 'সো হোয়াট ভাইস প্রেসিডেন্ট উইল টেক ওভার।'... বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধার পৰে এটা কি বলা সম্ভব? খুনী মোশতাক, ফারম্নক-রশীদ চক্রের জবানী এবং অন্যান্য সাৰ্যপ্রমাণে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রের কথা জানতেন। কিন্তু এটা জানার পরও উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে, তিনি তাঁর উপর অর্পিত কোন দায়িত্ব পালন করেননি। লৰণীয় বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত বেশির ভাগই 'মুক্তিযোদ্ধা' অর্থাৎ সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবেই তাদের 'পস্নান্টেড' করা হয়েছিল। আর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে দিয়ে এদের নেতৃত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। যার আপাত পরিচয় একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, একজন সেক্টর কমান্ডার এবং একজন বীরোত্তম। তিনি তখন আসলে বাঙালীর দানব।
জিয়া রাষ্ট্রৰমতা দখল করেই জাতির পিতার খুনীদের ইনডেমনিটি বহাল রাখেন। তিনি তাদের অনেককে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লোভনীয় চাকরি দেন। জিয়া ৰমতা গ্রহণ করে সামরিক বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নামে মুক্তিযোদ্ধা নিধন শুরম্ন করেন। কর্নেল তাহেরসহ প্রায় দুই হাজার সেনাবাহিনীর নানা সত্মরের সদস্য প্রহসনের বিচারের বলি হন। জিয়া '৭২-এর সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সত্মম্ভগুলো সরিয়ে ফেলেন সংবিধান থেকে। ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। নিষিদ্ধ জামায়াত আবার রাজনীতি করার সুযোগ পায়। বিদেশী নাগরিক গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। ৰমতায় বসে রাষ্ট্রীয় অর্থে মুসলিম লীগের মতো একটি পাঁচমিশালী দল দঠন করেন, যার নাম দেন 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল'। একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জিয়া একটি রাবার স্টাম্পের পার্লামেন্ট গঠন করেন। ঐ সংসদের নেতা করেন একজন স্বাধীনতাবিরোধীকে। জিয়া দালাল আইন বাতিল করেন। জেল থেকে মুক্তি দেন চিহ্নিত অপরাধে অভিযুক্ত স্বাধীনতাবিরোধী এবং রাজাকারদের। অর্থাৎ ১৯৭১-এ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যা কিছু অর্জন করেছিলাম তার পুরোটাই ধুয়েমুছে, 'বাংলাদেশ'কে 'মুক্তিযোদ্ধা' জিয়া একটুকরো পাকিসত্মান বানিয়ে ফেলেন। '৭১-এর পরাজয়ের এক চরম প্রতিশোধ নেয় দেশী-বিদেশী সেই গোষ্ঠী যারা কোনদিন বাংলাদেশ চায়নি।
জিয়া বাংলাদেশের জোটনিরপেৰ পররাষ্ট্র নীতি থেকে সরে এসে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে সমার্পিত করেন বাংলাদেশকে। আবার সামপ্রদায়িকতার বিষবাম্পে আক্রানত্ম হয় বাংলাদেশ। ধর্মের বিভাজন রেখা তৈরি হয়। জিয়া রাজনীতিকে ডিফিকাল্ট করতে রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ ঘটান দুর্নীতি এবং দুবর্ৃত্তায়নের। 'মানি ইজ নো প্রবলেম'-এর আলোকে আসলে কালো টাকার দৌরাত্ম্য, পেশী শক্তির দৌরাত্ম্য কায়েম হয় রাজনীতিতে। '৮১-তে জিয়াউর রহমান এক সেনা অভু্যত্থানে নিহত হলেও তার রাজনৈতিক ধারা অব্যাহত থাকে '৯০ পর্যনত্ম।
জাতির পিতার হত্যাকা-ের পর উল্টোযাত্রার বিপরীত গল্পটাও শুরম্ন হয় ১৯৮১-তেই। এই গল্প বাঙালীর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী, শোষকরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের মধ্যে দিয়ে যে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিল, বীর বাঙালী সেই যুদ্ধের শেষ হতে দেয়নি। আবার এই যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরম্ন হয় ১৯৮১-র ১৭ মে। জাতির পিতার রক্তে ভেজা মাটিতে ফিরে আসেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। যার কারণে পাকিসত্মানীদের জয়টা চূড়ানত্ম জয় হলো না। শেখ হাসিনা যদি ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট দেশে থাকতেন, তিনিও পিতার মতোই শহীদ হতেন, কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসটা অন্যভাবে লেখা হবে, সবার অলৰ্যে নিয়তি যেন এটা ঠিক করেই রেখেছিলেন। তাই সুদূর জার্মানিতে বসে শেখ হাসিনা শুনলেন, জীবনের সবচেয়ে মর্মন্তুদ সংবাদ। পিতার রক্তের ঋণ শোধ করতে তিনি প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এলেন, পিতার হত্যার ৬ বছর পর। শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনই বাঙালীর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখাল, বাঙালীর অধিকার আদায়ের পুনর্জাগরণের পথ দেখাল। শেখ হাসিনা শোকেবিধুর অবরম্নদ্ধ বাংলাদেশে এলেন জাগরণের ডাক দিতে। আবার শুরম্ন হলো আন্দোলন, সংগ্রাম। এ যেন '৭১-এর পূর্ববর্তী ঘটনাবলীরই পুনরাবৃত্তি। পার্থক্য শুধু একটু, '৫২ থেকে '৭১ আমরা সংগ্রাম করেছি অবাঙালীদের বিরম্নদ্ধে আর এবার বাঙালী চেতনাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বাঙালীর বিরম্নদ্ধে। পাকিসত্মানীদের বিরম্নদ্ধে সংগ্রাম যতটা না কঠিন ছিল তার চেয়ে কঠিন হলো এই সংগ্রাম। কারণ, '৭৫-এর পর থেকে এই স্বাধীনতা গোষ্ঠী সংগঠিত হয়েছে, বিত্তশালী হয়েছে। তাদের আলাদা করাও কঠিন। শেখ হাসিনা ১৯৮১-তে এসে গণতন্ত্রের ডাকদিলেন, মূলত ১৯৮৩ সাল থেকে শুরম্ন হলো গণতন্ত্রের সংগ্রাম। এই সংগ্রামের একটা পর্যায়ে প্রায় এক বছর পর জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী রাজনীতির মঞ্চে পা রাখলেন। এই ঘটনাটিও '৭১-এর মতোই। '৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের ফসল যেন বাঙালীরা ঘরে তুলতে না পারে সেজন্য যেমন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করানো হয়েছিল জিয়া-মোশতাক-ফারম্নক-রশীদকে, তেমনি '৮৩-তে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢুকে যায় বিএনপি-জামায়াত। যে দলটির জন্ম হয়েছিল অবৈধ সামরিক শাসকের গর্ভে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে কেনাবেচার মাধ্যমে যে দলটির জন্ম, যে দলটি রাজনীতিতে পেশী শক্তি, সন্ত্রাস এবং কালো টাকার প্রবেশ ঘটানো_ তারাই হলো গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সৈনিক। অবলীলায় তারা আওয়ামী লীগের পাশে আন্দোলনে নেমে পড়ল। সঙ্গে যোগ হলো জামায়াত। '৭১-এ যারা বাংলাদেশের অসত্মিত্বের বিরম্নদ্ধে লড়াই করেছে, আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে। এভাবেই '৭১-এর মতো '৮৩-৯০-এ স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মিশে গেল অগণতান্ত্রিক শক্তি। তাই গণতন্ত্র তার পূর্ণতা পেল না। '৯১-এর নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করল বিএনপি। কিন্তু শক্তিশালী বিরোধী দলের কারণে তাদের মেনে নিতে হলো সংসদীয় গণতন্ত্রের দাবি।
যে দলের জন্ম ৰমতার মধ্যে, স্বৈরাচারকে বৈধতা দিতে যে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি তারা কিভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করবে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চলবে? এটা স্পস্ট হলো '৯১-৯৬ বিএনপি শাসনামলে। সংসদ নেত্রী সংসদে আসেন না, সংসদের পাশ কাটিয়ে আইন প্রণয়ন হয় অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে। সংসদীয় কমিটি গঠিত হয় না। এভাবে নামেই সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হলো, বাসত্মবে চলল প্রধানমন্ত্রীর একনায়কতন্ত্র।
বিএনপি এবং এরশাদের জাতীয় পার্টি একই মুদ্রার এ-পিঠ ও-পিঠ, দুটোই সৃষ্টি হয়েছিল রাষ্ট্রীয় কোষাগার উজাড় করা অর্থে। তাই জাতীয় পার্টি বা এরশাদ ৰমতায় থাকার জন্য ১৯৮৬-তে যেভাবে মিডিয়া কু্যর আশ্রয় দিয়েছিলেন, বেগম জিয়াও ১৯৯৪-তে মাগুরা উপনির্বাচনে একই কা- করলেন। ভোটের অধিকার পাল্টে দিয়ে নিজের দলের প্রার্থীকে জয়ী করার এক বাজে দৃষ্টানত্ম স্থাপন করলেন। এই উপনির্বাচন, জাতির সামনে উন্মুক্ত করে দিল বিএনপির আসল চেহারা, তাদের স্বৈরাচারী রূপ। আমরা সেই যুদ্ধে আসলে হেরেই থাকলাম। বাংলাদেশ এগুতে থাকল 'আরেকটি পাকিসত্মান' হবার দিকেই।
মূলত মাগুরা নির্বাচন সকলের চোখ খুলে দিল। এই নির্বাচন প্রমাণ করল গণতন্ত্র থেকে আমরা বহুদূরে। '৯১ থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি বিষয় স্পষ্ট হলো, তা হলো এখনও আমরা গণতন্ত্র থেকে বহুদূরে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে আমাদের যে উল্টোপথে যাত্রা শুরম্ন হয়েছিল, আমরা আজো সেই পথেই হাঁটছি। বিএনপির এই শাসনামলে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হলো তাহলো সত্যিকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা আবার ডাক দিলেন গণতন্ত্রের সংগ্রামের ভোটের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের। তিনি ঘোষণা করলেন নির্দলীয় নিরপেৰ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা। আবার আন্দোলন, অধিকার আদায়ের জন্য মানুষের জীবনদান। কিন্তু '৭১-এর পরাজিত শক্তিরা কি এত সহজে মাথানত করে? তারা শেষ চেষ্টা করে। ১৯৯৬-এর ১৫ ফেব্রম্নয়ারি এক প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ৰমতা অাঁকড়ে রাখতে চায়। কিন্তু আন্দোলনের তোড়ে প্রহসনের নির্বাচন ভেসে যায়। অবশেষে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেৰ তত্ত্ব্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। নানা ষড়যন্ত্র পেরিয়ে অবশেষে তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সব অপপ্রচার কূটকৌশলের জাল ছিন্ন করে অবশেষে ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয় হয়।
দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তাদের বিরম্নদ্ধে সব অপপ্রচারের জবাব দেয়। দেশে কোন দুর্ভিৰ হয়নি, বরং বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, একটি বাড়ি একটি খামার, নারীদের ৰমতায়ন ইত্যাদি নানা উদ্যোগ বাংলাদেশকে একটি কল্যাণকামী শোষণমুক্ত রাষ্ট্রের পথে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ সব ৰেত্রে এক সম্ভাবনার চিহ্ন রেখেছে। কিন্তু যুদ্ধটা তখনও শেষ হয়নি।
'৯৬ থেকে রাষ্ট্র পরিচালনায় আওয়ামী লীগের সুশাসন '৭১-এর পরাজিত শক্তিকে আবার ষড়যন্ত্রের পথে নিয়ে যায়। '৭১-এর পরাজিত শক্তির নেতৃত্বদানকারী দল বিএনপি এবং জামায়াত বুঝতে পারে যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অবাধ ও নিরপেৰ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে সরানো অসম্ভব। তাই, শুরম্ন হয় নতুন চক্রানত্ম। একদিকে সারাদেশে জঙ্গীদের আর্থিক সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়, অন্যদিকে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নীলনকশা তৈরি করা হয়। আর এই ষড়যন্ত্রে আরেকবার পরাজিত হয় মুক্তিযুদ্ধের পৰের শক্তি। ২০০১ সালের এক 'অনবদ্য কারচুপির নির্বাচনে ৪২ ভাগ ভোট পেয়েও আওয়ামী লীগ পায় মাত্র ৬২ আসন। '৭১-এর পরাজিত শক্তিদের জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়। এই বিজয়ের পর পরই তাদের সব আক্রোশ এসে পরে নিরীহ, শানত্মিপ্রিয়, গণতন্ত্রকামী মানুষের উপর। আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার অভিযোগে নির্বিচারে হত্যা করা হয়, লুটপাট, অগি্নসংযোগ আর ধর্ষণ করা হয় '৭১-এর স্টাইলে। রক্তাক্ত হয় মানবতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে একদিকে বাংলাদেশে দুর্নীতি, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করা হয়, অন্যদিকে সারাদেশে উত্থান ঘটে জঙ্গীদের।
এ সময় তারা বুঝে যায়, ৰমতাকে চিরস্থায়ী করতে তাদের প্রয়োজন ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের মতো আরেকটা ঘটনা। কারণ জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন যুদ্ধটা শেষ হবে না। মূলত এই চিনত্মা থেকেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার পস্নট সাজানো হয়। এখন ঐ গ্রেনেড হামলা মামলার তদনত্ম চলছে, ঐ তদনত্মে যে সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে, তাতে বিষয়টি স্পষ্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল একই সূত্রে গাঁথা। মুক্তিযুদ্ধেরই এটি আরেকটি অধ্যায়। এই যুদ্ধটা আজো চলছে...।
এরপর বুড়িগঙ্গার অনেক জল গড়িয়েছে। আবার একটি গণঅভু্যত্থানের মুখে বিএনপি-জামায়াত জোট আরেকটি প্রহসনের নির্বাচনের চেষ্টা করেছে। সংবিধান লঙ্ঘন করে ড. ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করে। কিন্তু এতে আন্দোলন আরও তীব্র হয় অবশেষে বিএনপির অনুগ্রহপুষ্টদের উদ্যোগে গঠিত হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপি যাকে ১০ জনকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপ্রধান করেছিলেন, সেই মঈন উ আহমেদের উদ্যোগে আসে ওয়ান ইলেভেন মূলত গণআক্রোশ থেকে বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচাতে। দুর্নীতির দুর্গন্ধময় বিএনপি-জামায়াতকে বাঁচাতে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভারসাম্য কর্মসূচী নেয়। একজন বিএনপির চিহ্নিত দুর্নীতবাজ ধরেই তারা আওয়ামী লীগের একজন নেতা বা কর্মীকে ধরে তার গায়ে দুর্নীতিবাজের সিল লাগিয়ে দেয়। গ্রেফতার করে শেখ হাসিনাকে। '৭১-এর নীলনকশা বাসত্মবায়নের লৰ্যেই ভিন্ন পথে হাঁটতে থাকে তারা। কিন্তু নীরব ৰোভ আর আনত্মর্জাতিক চাপের কাছে শেষ পর্যনত্ম নতিস্বীকারে বাধ্য হয় ওয়ান ইলেভেন সরকার। একটি নিভর্ুল ভোটার তালিকা তৈরি হয়, স্বচ্ছ ব্যালট বাঙ্রে ব্যবস্থা হয়। অবশেষে নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই বছর পর একটি অবাধ ও নিরপেৰ নির্বাচনে এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পৰে নিরঙ্কুশ সমর্থন দেয়। তিন-চতুথাংশেরও বেশি আসন পেয়ে জয়ী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট। এবার আওয়ামী লীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অঙ্গীকার করে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে। সে অনুযায়ী এক বছর পর আনত্মর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আইন ১৯৭৩-এর আওতায় একটি ট্রাইবু্যনালও গঠন করেছে। বিভিন্ন মামলায় কয়েকজন জামায়াত নেতাকে সরকার গ্রেফতারও করেছে। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর, বিচার বিভাগকে অর্গলমুক্ত করা হয়েছে। দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা সর্বোচ্চ আদালতে আটকে রেখেছিল '৭৫-এর অপশক্তির দোসররা। আওয়ামী লীগ দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই বাধা অপসারিত হয়। সর্বোচ্চ আদালত খুনীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ম্ তু্ দন্ডে দন্ডিত করে। এদের কয়েকজনের রায় কার্যকর হয়েছে, কিন্তু এখনও ডালিম, রশীদের মতো খুনীরা পালিয়ে আছে।
স্বাধীন বিচার বিভাগে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ এক ঐতিহাসিক রায়ে পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত এক বাংলাদেশ গড়ার বাধাগুলো একে একে অপসারিত হচ্ছে।
কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যুদ্ধটা এখনও চলছে। '৭১-এর পরাজিত শক্তি '৭৫-এর অপশক্তি আবার আঘাত হানতে পারে, তারা সেই হুমকিও দিচ্ছে।
তাই আজ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পাওয়া না পাওয়ার দ্বন্দ্ব ভুলে, মান অভিমান না করে আমাদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করতে হবে, তাহলেই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পাব। যে দেশে যারাই ৰমতায় আসুক, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পদদলিত করবে না, মানুষের অধিকার হরণ করবে না, জাতির পিতাকে অসম্মান করবে না। সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার যুদ্ধে আসুন আমরা শরিক হই, চূড়ানত্ম বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত।
No comments:
Post a Comment